কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

বৈজ্ঞানিকভাবে চাষ : ফিরছে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ

 

করোনায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। টানা এ বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ওমর ফারুক ইমরান, সাদাউদ জামান ও আব্দুল্লহ আল মাহমুদ নামের তিন শিক্ষার্থী হারিয়ে যাওয়া দেশীয় মাছ চাষ করে দেখছেন সাফল্যের মুখ। সময়ের অপচয় না করে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ উদ্যোগে করেছেন বিলুপ্ত প্রায় তিন জাতের দেশীয় মাছের চাষ। নয় মাসে সাফল্যের মুখও দেখছেন। লক্ষ্যমাত্রার থেকে দুই মেট্রিকটন বেশি মাছ পাবেন বলে জানান পটিয়া বৈলতলী কচুয়াই এলাকার এ শিক্ষার্থীরা।

শুধু এ তিন শিক্ষার্থীই নয়, এলাকায় তাদের মত অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় এসব মাছের। জেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্যে মতে, বাংলাদেশ থেকে এরমধ্যে প্রায় ৩১ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তবে এসকল মাছ এখন বৈজ্ঞানিকভাবে চাষের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে বিলুপ্ত প্রায় ৩১ প্রজাতির মাছের মধ্যে পাঁচ প্রজাতির মাছের চাষ শুরু হয়েছে।

বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মাছের মধ্যে গুলশা, পাবদা, শিং, মাগুর ও কই জেলার ১৫টি উপজেলায় চাষ হচ্ছে। ১৫ উপজেলায় ৫০ জনের বেশি চাষী এ মাছগুলো চাষ করছে। তরুণ উদ্যোক্তা ইমরান ও সাদাউদ বলেন, এই মাছ চাষ বেশ লাভজনক। তবে মাছ চাষে বেশ ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে। যেমন বৈজ্ঞানিকভাবে চাষের সরঞ্জামগুলো বেশ খরচ সাপেক্ষ। মাছের খাবার দামি ও যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না। যদিও আমরা উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সংগ্রহ করি। তবে চাইলে সব তারা পারে না। কারণ অনেকে নিজ উদ্যোগে এসব মাছের চাষ করছে।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ১৫ উপজেলায় সরকারিভাবে দুটি করে ৩০টি দেশীয় মাছের প্রদর্শনী কেন্দ্র রয়েছে। আমাদের পক্ষেতো আর সবাইকে সবরকম সহযোগিতা দেয়া সম্ভব নয়। চট্টগ্রামে বিলুপ্ত মাছের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে দুই বছর ধরে। এরমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় আমরা দু’জন করে চারজনকে সবরকম সহযোগিতা দিচ্ছি। এ সেবা ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে।

তিন বন্ধু বলেন, আমরা তিন জনেই বিবিএ ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছি। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। কি করবো ভাবতেই দেখি উপজেলা মৎস্য অফিসে বিলুপ্ত মাছের চাষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তিনজনে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় চারটা পুকুরে ১২০ শতক জায়গায় মাছ চাষ শুরু করি। তারা আমাদের মাছের পোনা ও খাবার দেয়। বৈজ্ঞাকিভাবে কই, শিং, মাগুর ও পাবদা মাছের চাষ করছি। একটা পুকুরেই শুধু শিং মাছের চাষ করছি। চারটা পুকুর মিলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা তিন মেট্রিকটন। কিন্তু আমরা আশা করছি প্রায় ছয় মেট্রিকটন মাছ পাব।

পটিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকতা লুৎফুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে দেশি মাছের চাষ শুরু হয়েছে দুই বছর হলো। এসময়ের মধ্যে কর্ণফুলী ও পটিয়া উপজেলায় দেশীয় মাছের চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ২৪ জনকে। তাদের মধ্যে ছয়জনকে নগদ অর্থ, পোনা ও খাবার দিয়েছি। এ মুহূর্তে এ দুই উপজেলায় দেশি মাছের চারটি প্রদর্শনী রয়েছে। তাদের দেখে অনেকেই এখন ব্যক্তিগতভাবে এ মাছগুলোর চাষ শুরু করেছে। যারা আমাদের মাধ্যমে পোনা সংগ্রহ করছে। সবাই লাভের মুখ দেখছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারজানা লাভলী বলেন, গত কয়েক বছরে বিলুপ্ত মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে শিং, মাগুর, পাবদার। এটি বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন আরো বাড়াতে সাহায্য করছে। সারাদেশে আরো আগে থেকে শুরু হলেও চট্টগ্রামে দুই বছর হলো আমরা বিলুপ্ত প্রায় মাছ নিয়ে কাজ করছি। চট্টগ্রামে হাওড় ও বিল কম থাকায় এ এলাকায় ৩১ প্রজাতির সব মাছ হয়তো চাষ করা সম্ভব নয়। তবে বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোর মধ্যে পাঁচ জাতের মাছ এরমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষিতভাবে চাষ শুরু হয়েছে। এক বছরে ১৫টি উপজেলায় দুই মৌসুমে ছয়জন করে ১২ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এভাবে দুই বছরে প্রায় ৩৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মধ্য থেকে ছয়জন করে আমরা বাছাই করে নিয়েছি। যাদের মাছ চাষের জন্য সকলরকম সহযোগিতা করছে উপজেলা মৎস্য অফিস।

পাঠকের মতামত: